Friday 28 May 2010

Malay Roychoudhury's Love Poems - মলয় রায়চৌধুরীর প্রেমের কবিতা


প্রস্তাবনা
ডক্টর তরুণ মুখোপাধ্যায়, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়


বিশ শতকের ষাট বা ছয়ের দশক বাংলা কবিতার ইতিহাস যে-কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে, তার মথ্যে হাংরি আন্দোলন অন্যতম, এ-বিষয়ে দ্বিমত নেই । আর এই হাংরি আন্দোলনের অন্যতম নেতা মলয় রায়চৌধুরী । যিনি আজও সৃজনক্ষম । গদ্যে-পদ্যে যিনি তাঁর মৌলিক চিন্তাভাবনা ও প্রতিবাদ অক্ষয় করে চলেছেন । কারো আনুকুল্য বা হাততালির প্রত্যাশা করেন না । ভুল কি ঠিক, সে-বিচার করবে ইতিহাস বা মহাকাল । পরোয়াহীন এই লেখককে তাঁর নিজস্ব ভাষামুদ্রা ও ভঙ্গির জন্য অভিবাদন জানাতেই হয় । আমরা জানি প্রথাভাঙার স্পর্ধা তখন সরকার মানতে পারেনি । কাব্যে অশ্লীলতার জন্য মলয় রায়চৌধুরীকে গ্রেপতার করা হয় ।

বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রনাথের পর নতুন সুর শুনিয়েছিলেন তিরিশের কবিরা । চল্লিশের কবিদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রতিবাদী ভঙ্গি আরেক মাত্রা যোগ করেছিল । আত্মকথন ও আত্মরতিকে সম্বল করে অন্যরকম স্বাদ নিয়ে এলেন পঞ্চাশের কবিরা । আর ষাটের কবিরা, বিশেষভাবে 'হাংরি আন্দোলন' আমূল নাড়া দিলো বাংলা কবিতার সনাতন ঐতিহ্যকে, নিয়মানুবর্তিতাকে । কবিতার ভাষায়, ছন্দে, অলংকারে, স্তবকে তুমুল ভাংচুর পাঠকের অভ্যস্ত চোখ ও কানকে বিব্রত করে তুলল । বিশেষত মলয় রায়চৌধুরীর লেখায় যৌনতার সঙ্গে এলো ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিস্ফলতার যন্ত্রণা । কিভাবে মলয় রায়চৌধুরী তাঁর কবিতায় আত্মপ্রক্ষেপ ঘটিয়েও নিরপেক্ষ হয়ে যান, সামাজিক ঘটনার দ্রষ্টা হন, নির্মম সমালোচনায় শাণিত গিস্পাত হয়ে ওঠেন, তা তাঁর কবিতাগুলি পড়লে টের পাওয়া যায় ।
( স্বপ্ন পত্রিকার শারদ ১৪১৫ - ইংরেজি ২০০৮ - সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত )
 
 

"হাঁপানিরোগ, প্রিয়তমাসু"

এতো মনে রাখো তুমি, কখন হঠাৎ মাঝরাতে এসে টোকা দাও

ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে শ্বাস বন্ধ করে দাও, জেগে উঠি

সঙ্গে আনো হাওয়ায় উড়ন্ত রাতের রঙিন পরাগ

হাইওয়ে দিয়ে ছুটে যে সমস্ত ভারি-ভারি ট্রাক যাচ্ছে
কুরুক্ষেত্রে দুঃশাসনের রক্তপায়ী ভীমের অগ্নিচোখ জ্বেলে

তাদের উন্মাদ ডিজেলের গুঁড়ো ট্যালকম পাউডারের মতো

সারা গায়ে মেখে আসো, অগাধ ঘুম থেকে টেনে তোলো

তোমার নিঃশ্বাসের সাথে আমার প্রশ্বাস মিলিয়ে ছন্দহীন

বাজাও আয়ুসঙ্গীতের ফুলকি ক্ষণে ক্ষণে

তোমাকে ছেড়ে আমি কৃত্রিম প্রিয়াকে হাতে তুলে নিই

তার শ্বাস আমাকে শান্ত করে, তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমোই–

জোর করে প্রেম করা যায়নাকো, কতোবার বলেছি তোমায়

সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছি সকাল-বিকেল-মাঝরাতে

আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যাও, ভালো আমি তোমাকে বাসি না

জল


জলেতেই তোমার নাচের ভঙ্গিমা

ঝুঁকে আর ওপরে দুহাত তুলে কুয়ো থেকে জল তোলো

নদীস্রোতে মাটির ঘড়া দিয়ে ঢেউকে সরাও

কোমরে আঁচল গুঁজে পাড়ার কলে জল ভরো

কয়েক ক্রোশ হেঁটে মাথায় কলসি নিয়ে চলে যাও 

জলই তোমার দেহে ঢেউ তোলে

কোটি-কোটি বচ্ছর আগে গভীর সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলে

সারা গায়ে লোম ছিল মাথায় যোনিতে হাতে-পায়ে

তবু তা তোমার শরীরের ভাঁজে নাচকে লুকোতে পারেনি

জলেতেই তোমার নাচের ভঙ্গীমাগুলো ছিল আর আছে

কেউ তো জানতে চায়নি”

কেউ কেন জানতে চায়নি কখনও কবিতার শিরোনামে
‘ছুতার’ শব্দটি কার কথা বলে ! অনুবাদে যিশু হয়ে গেল !
মেরি ম্যাগডালেন তুমি তো লুকিয়ে আছো শুভাদেবী হয়ে
কাঁধে ক্রুশকাঠ নিয়ে যিশু যতক্ষণ হেঁটেছেন, তুমি ছিলে
তাঁর সঙ্গে ; অপরিসীম প্যাশন আমাকে বাল্যের স্কুলে
বলেছিলেন ফাদার হিলম্যান, সংলগ্ন গির্জায় বাইবেল ক্লাসে--
শুনে, আমার অদম্য বিচলন রয়ে গেছে রক্তের বুদ্বুদে
কবিতায় দুইটি প্যাশন নিয়ে যে জাল বুনেছিলুম তা কেউ
ধরতে পারেনি, এক মাস ঠায় নব্বুই লাইনের কবিতায়
যিশু হয়ে ক্রুসবিদ্ধ হবার জন্য চলেছি সারাটা জীবন
হে মেরি ম্যাগডালেন যৌবনের উদ্বেল প্রেমিকা শুভা
তোমার জাগতিক মৃত্যুর খবর এলো আজই ভোরবেলা
আমার ক্রুসকাঠের মতো তুমিও অমর একটি কবিতায়

 

প্রেমিকার মৃত্যু


পা থেকে মাথা ওব্দি খিঁচুনি তুলে মারা গেলেন উনি 

নামকরা কবি, ওনার কবিতা শুনতে কতো যে লোকজন জড়ো হতো

মারা গেলেন আজকে সকালে একা, এক্কেবারে একা

বউ-ছেলে-মেয়ে বন্ধুবান্ধব শিষ্য কেউই ছিল না পাশে

মরবার সময়ে কি আশেপাশে আত্মীয়স্বজন কিংবা অন্তত

ছুটে এসে মুখে জল দিতে পারে এমনই কাউকে তো চাই

অথচ কেউই ছিল না, নামকরা কবি

মরার সময়ে এক তরুণীর মুখ উঁকি দিয়েছিল

যাকে উদ্দেশ্য করে সমস্ত প্রেমের কবিতা লিখে গিয়েছেন

.

কবি নয়, কবির প্রেমিকার মৃত্যু হলো

কবি তো নামকরা, ছাত্র-শিক্ষদের ক্লাসে আর

পরীক্ষা-খাতায় বহুকাল বেঁচে থাকবেন

প্রেমিকাকে তারা মনে রাখবে না



ছদ্মনামের প্রেমিকা

উৎসর্গ : মোহনা সেতু 

আসো দেখি প্রতিবার কোনো এক ছদ্মনাম নিয়ে

সন্দেহ থেকেই যায় তুমিই তো সেই মেয়ে নদীর ওপার থেকো আসো

নৌকোর ছইয়ে লুকিয়ে

বুঝতে পারি না ভালো করে তুমি সত্যিই তুমি কিনা

দেহ তো একই যুবতীর তবে মুখশ্রী বদলে যায় কেন ?

আমাকে উন্মাদ করে দিতে চাও জানি

কিন্তু এভাবে ? আমি তো আগেই উন্মাদ তোমাকে পাবার জন্য

মোহনার সেতু, আর কতো ছদ্মনাম নিয়ে নদী পারাপার করে

মাঝরাতে স্বপ্নে নৌকোর দাঁড় বেয়ে আসো

একদিন প্রকৃত নামে এলে কীই বা হবে

হয়তো কানাকানি হবে । হয়তো লোকেরা বলবে, এই মেয়ে

মোটেই মোহনা নয়, সেতুও নয় যে আপনার কাছে পৌঁছোবে 

চিরকাল থেকে যাবে ছদ্মনামে, চিরকাল ভুলিয়ে রাখবে আপনাকে

একই যুবতী-শরীর আর প্রতিদিন পালটাতে থাকা ছদ্মনাম নিয়ে


 

 

আমি তো কেউ নই
উৎসর্গ : সোনালী চক্রবর্তী

আমি তো কেউ নই, তুমি তো বিখ্যাত
কেউ না হওয়াও কি খ্যাতির প্রতিচ্ছায়া নয় ?
তুমি তো জ্যোতির্ময়ী, তুমি তো অবিনশ্বরী
আমি তো কেউ নই, তুমি তো পরমাপ্রকৃতি
আমি প্রকৃতির অংশ, যৎসামান্য, বলা যায়
উষ্ণতম মলয়বাতাস, আমি কার্তিকেয় যোদ্ধা
অথচ কেউ নই । কেউ না হওয়ায় যে আনন্দ
তা তুমি বুঝবে না আমি তো আমিও নই
কেউ নই কিছু নই অস্তিত্ববিহীন তুমি ছাড়া
তোমার হাত ধরে অন্ধ আমি ইতিহাসে
তোমার সঙ্গে থেকে যেতে চাই

বুড়ি

এই বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতি রাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেকে মজে খায়
দিদিমার মতো বলেছে, মরবে
যখন, চুড়ি-নাকছাবি খুলে নিয়ে
তারপরে আলতা-সিঁদুর দিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হলো সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হলো শাঁখাও পরেনি
দামি দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে, এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্হ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে, কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর, কারুক্কে নয়
একথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি ।
 
অংশুমালী অবন্তিকা, তোর ওই মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার
কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত  বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
বহতা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–
অমরত্ব অমরত্ব ! বহতা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস




মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, "চলুন পালাই"
ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই
নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন
ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, "ভালোবাসি" লেখা কার্ডসহ
সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট
তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাঝ ডুবিয়েছিলে
তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি
উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না
গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই
চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আইড্রপ দিও
গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ-করাই আছে
আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না
মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও
ছ'মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও
ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে
রাত হলে দু'চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না
কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো
মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, মোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে




তানিয়া অবন্তিকা চক্রবর্তীর জন্য প্রেমের কবিতা

কী নেই তোর ? মরুভূমির ওপরে আকাশে পাখিদের তরল জ্যামিতি
        প্রতিবার -- বিপদের ঝুঁকি -- সম্ভাবনা -- বিরোধ -- সমাক্ষরেখা --
        আমি তো লাল-ল্যাঙোট সাধু, আমি বাস্তব, তুই বাস্তবিকা
কুলু-মানালির পাইন থেকে ঝরাচ্ছিলিস সবুজ ছুঁচের গোছা
        ক্ষান্তি -- পূর্বপক্ষ -- ধাঁধা -- গূঢ়গুণ -- শিল্পবর্ম -- মেজাজ -- সন্দেহ
        আমি তো ছায়াফোঁকা সাধু, তুই যতোদিন আছিস মরব না
এক মিনিট দাঁড়া : "কোনো কিছু প্রিয় নয়", মানে ?
        জানি রে জানি, অঙ্কুরের বোধ তার বীজে, অয়ি স্পন্দনসমঙ্গ
        আমি তো সীমাভাঙুনে সাধু, তোর রহস্য দখল করার দাম চুকিয়েছি
চাপাতি দিয়ে কেটে যেসব মেঘ নামিয়েছিলিস, অক্ষরগুলোর শ্বাস
        বানান ভুলে যায়, ফি-সেকেণ্ডে নাড়ি-ঘাতের হার বাড়িয়ে দিস
        আমি তো বুনোপ্রেমিক সাধু, আমার প্রেম বদনাম করবে তোকে
প্রাণচঞ্চল বাদামি পাথরের কাঁপুনি, অণুরণন, অয়ি প্ররোচনাময়ী
        অ্যানার্কি -- হাই ভোল্টেজ উল্কি -- ক্রিয়া না য়িশেষ্য বুঝতে পারি না
        আমি তো মাটিতে-পোঁতা সাধু, তুই খুঁড়ে তুলবি বিপদে পড়বি
আমি ভাটিয়ালি গেয়ে বেড়াই, নৌকোর দাঁড় বাইনি কখনও
        আসলে গান তো নৌকোর, দাঁড়ের, নদীর স্রোতের, ভাটার টানের
        আমি তো তোকে-চাই মার্কা সাধু, বাক্যদের উত্তেজিত কোন ম্যাজিকে করিস
এক মিনিট দাঁড়া : "কাউকে ভালোবাসিনি আমি", মানে ?
        অয়ি ফাঁদগর্ভা, যখন কাঁটাগাছের দিকে জিরাফের জিভ নিয়ে যাস
        আমি তো ভাঙাগড়ার সাধু, পথ গুটিয়ে পাথর করে দিস
পৃথিবী থেকে ছবি খুঁটে-খুঁটে নিজের ব্র্যাণ্ডের ছাপছোপ দিস
        টের পাই কালো বিশ্ববীক্ষায় আমার নামের স্হায়িত্ব নেই
        আমি তো সাধু-প্রেমিক তোর, পৃথিবীর নাম দিসনি কেন ?
অয়ি শব্দমোহিনী, না পড়েই উল্টে যাচ্ছি পাতার পর পাতা
        অস্হির কৌতূহলে এই কবিতাটা এগোচ্ছে আর তোকে শুনতে পাচ্ছে
        আমি তো বাকমোহন সাধু, লিখিসনি তো প্রেম কেন ভিজে এবং গরম
আসলে জীবন নষ্ট করার কায়দা সকলে জানে না,
        ঘুম থেকে উঠে হাই তুলিস আর তোর গোলাপি আলজিভ দেখি
        আমি তো খুনির খুনি সাধু, যথেচ্ছ খরচ করিস শব্দ -রজঃ - টাকা
ম্যাডক্স স্কোয়ারের কুঁজো পুরুতের ঢঙে তোর আরতি করি
        তোর ইঙ্গুজের বেদনা যন্ত্রণা ব্যথা কষ্ট প্যানিক দিয়ে
        আমি তো হাজারঠ্যাং সাধু, গাছেদের ঝোড়ো চিৎকার
এক মিনিট দাঁড়া : "ব্যথা ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই", মানে ?
        তোর কথার হাঁফ-আকূলতা আমার হৃদরোগের কারণ
        আমি তো ২৪x৭ সাধু, ফলো করি ফলো করি ফলো করি
মৃত্যু মানেই তো প্রতিশোধ, মানুষের হোক বা প্রেমের
        দেখেছিস তো, যতো রাগি ঝড়, ততো সে দেশদ্রোহী
        আমি তো ল্যাঙোটহীন সাধু, দেখি অনুভবকে আঙ্গিক দিচ্ছিস
সঙ্গীত যে-ভাবে গানকে বিষাক্ত করে, আমার কপালে খুনির বলিরেখা
        ইটারনাল ব্লিস, রেড ওয়াইনে চোবানো তোর ছবির ঝুরো     




সোনালী মিত্র অবন্তিকার জন্য প্রেমের কবিতা

পুরাণের সংস্কৃত পাতা থেকে নেমে এসে তুইই শিখিয়েছিলিস
কবির লেখকের গণ্ডারের চামড়া খুলে রাস্তার ভিড়েতে মিশে যেতে
তার আগে নিজেকে বড়ো উন্নাসিক ভেবে কাদার সুপারম্যান
হাতঘড়ির কলকব্জায় ঝড়েতে মেটাফরগুলো চালুনিতে চেলে
ভেবেছি পিস্তল পাশে নেই বলে আত্মহত্যা করিনি এখনও
দিল্লির নিম্নচাপে চোখ এঁকে ফিরিয়েছিলিস শব্দ ভিজুয়াল
তরোয়ালে আইনি ঝলকে লিপস্টিকে ছাপা অটোগ্রাফ
প্রতিটি বিপ্লবের দাম হয় বদলের বাজারও তো বসে
জুলিয়াস সিজারের গম্ভীর শেক্ষপিয়ারি সাহিত্যের গমগমা ছেড়ে
সাধারণ মানুষের মতো প্রেমিক চাউনি মেলি তোর কথা মেনে
বুড়ো বলে সক্রেটিস সাজবার সত্যিই দরকার ছিল নাকি
গ্রিসের গাধার ওপরে বসে আথেন্স বা কলকাতার পচাগ্যাঞ্জামে
ধুতি পরে ? কাঁধে উত্তরীয় ! সাহিত্য সভায় ? নাকের বক্তিমে ঝেড়ে !
ভুলে যায় লোকে । মজার এ মরে যাওয়া । গন ফট । খাল্লাস ।
সোনালী প্রেমিকা ! তুইই বুঝিয়েছিলিস : হুদোহুদো বই লিখে
বিদ্বানের নাকফোলা সাজপোশাক খুলে দেখাও তো দিকি
কালো জিভ কালো শ্লেষ্মা কালো বীর্য কালো হাততালি
উলঙ্গ নাচো তো দেখি তাণ্ডবের আঙ্গিকবর্জিত তালে তালে
চুমুর পুনঃচুমু পুনঃপুনঃচুমু দিল্লির নিম্নচাপ মেঘে

এ দ্যাখ গণ্ডারের শিব-সত্য-সুন্দরের চামড়া খুলে ফেলে
আজকে পেয়েছি নখে প্রেমিকার চুলের জীবাশ্ম !

ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় অবন্তিকা-র জন্য প্রেমের কবিতা

অসহ্য সুন্দরী, আমার নিজের আলো ছিল না
তোর আলো চুরি করে অন্ধকারে তোরই ছায়া হয়ে থাকি
তোর আর তোর বরের নাঝে শ্বাসের ইনফ্যাচুয়েশানে
অসহ্য সুন্দরী, বেহালার কোন তারে তোর জ্বর, তা জানিস ?
জানি না কেমন করে রেমব্রাঁর তুলি থেকে পিকাসোর তুলিতে চলে গেলি !
তোর মাতৃতান্ত্রিক ইতিহাসের চেতনায়
তিনশো বছর পড়ে আছি সমুদ্রের গভীরতম জলে ভাঙা জাহাজে শেকলবাঁধা
সময়কালকে যে স্বরলিপিতে বেঁধে ফেলিস তা বলেছিস তোর বরকে ?
বলেছিস পরস্ত্রীকাতরতার প্রেমিককে মগজে চাকর করে রেখেছিস ?
সাঁতারু যেমন জলে সহজ তেমন তুই সময়কালে
অসহ্য সুন্দরী, আমাকে গড়ে নিয়েছিস ভয় যন্ত্রণা আনন্দের মিশেলে
অ্যানার্কিস্ট করে দিয়েছিস আমাকে--
মনে রাখি ব্যথা আর দুঃখই আগুন, হে অসহ্য সুন্দরী
তোর আর তোর বরের মাঝে পরস্ত্রীকাতরতার শ্বাস
শুনতে পাচ্ছিস ? শোন, কান পেতে শোন...

স্বচ্ছ দেওয়াল

সে দেওয়াল কেমন দেখতে
জানে না
দেওয়ালটা যার সেও কখনও
জানেনি
সে কেবল জানে রয়েছে
দেওয়ালখানা
বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে
সেই যুবকের জন্য
যাকে সে ভাঙতে দেবে
যুবকেরা তবু গলদঘর্ম হয়
স্বচ্ছ একটা পাতলা
দেওয়াল ভাঙতে
হাজার হাজার বছর যাবত
চলছে দেওয়াল ভাঙা
রক্তের সাথে রসের তৈরি
সেই দেওয়াল
যার ভাঙে তার গর্ব ধরে না
যে ভাঙছে তারও
অহমিকা নাচে ঘামে
রসের নাগর খেতাব মিলেছে
প্রেমিকের
প্রেমিকা দেখাবে চাদরে রক্ত লেগে
অধ্যবসায়ে সময়ের সাথে লড়ে
দেওয়াল ভাঙার সে কি আনন্দ
দুজনেরই
যে ভাঙল আর যার ভাঙা হল
সেলোফেন ফিনফিনে
দেওয়াল না ভেঙে মানুষ
জন্মাবে না
তাই
সব দেওয়ালই
স্বচ্ছ মাংসে গড়া
সেলোফেনে হোক কিংবা
লোহার ইঁটের অদৃশ্য
সীমারেখার
প্রেমের ঘামেতে ভিজিয়ে
ভেঙে ফেলা দরকার




উপমা অগাস্টিন খেয়া অবন্তিকার জন্য প্রেমের কবিতা

আমাদের দুজনের মাঝে একটা চুলের কাঁটা তারের সীমান্ত
একটা চুলের কাঁটা তারের ওই দিকে শুকতারা তিরিশ মিনিট আগে ওঠে
উপমাকে পেতে আমার সারা জীবন লেগে গেল, জানি পাবো না
পুরুষদের কাটা মাথার আবর্জনায় আমার মাথা তুই চিনতে পারিসনি
কবিতারা কেন যে উপমাকে বাদ দিতে শকুন কলোনিতে ঢোকে
আকাশে পাক ধরেছে, দেখতে পায় না--
প্রেমের ময়াল প্যাঁচ, ভালোবাসা আমার পেশা
আগুনে পোড়ানো ছায়া পাঠিয়ে দেবো চুলের কাঁটা তারের ওই পারে
ঝিঁঝিপোকাদের কোরাস ভেবে তুই এড়িয়ে যাবি
অথচ আমিই তো সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা
মগজের ভেতরে তোর কন্ঠস্বর দিয়ে ফাঁদপাতা মাকড়সার জাল
বর্ষার ফোঁসফোঁসানি মেশানো তোর হাঁ-মুখের ইলশেগুঁড়ি
ঘুমোতে ঘুমোতে একরাতে নিজের চামড়া খুলে পৌঁছে যাবো
দেখবো খেয়ার ঠোঁট বিদেশ চোখ বিদেশ থুতনি বিদেশ চুল বিদেশ
হাত বিদেশ নাভি বিদেশ বুক বিদেশ আলিঙ্গনও বিদেশ
গোলাপি পূর্ণিমার বিছানায় জন্মেছিলিস
তোর আব্বু আমাকে আফ্রিকার মানুষ মনে করেছিলেন
কেননা তোর দিকে চাইলেই আমার দুই কাঁধ নেচে ওঠে
অথচ আমি সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা



অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা

মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, হাত ধরে নিয়ে যাবি নরকের খাদে
রাবণের, কর্ণের, ভীষ্মের, দুর্যোধনের আর আমার জ্যান্ত করোটি

হাজার বছর ধরে পুড়ছে অক্ষরে, বাক্যে, ব্যকরণে, বিদ্যার ঘৃণায়
মনে থাকে যেন, শর্ত দিয়েছিস, আমার সবকটা কালো চুল বেছে দিবি

তিন-বুকের আধাবিদেশিনি, দুইটি বাঙালি বুক, একটি রেডিণ্ডিয়ান
সফেদ বৃন্ত দুটো পুরুষের নামে কেন ? প্ল্যাটো ও সক্রেটিস ? বল অ্যানা

অ্যানা দি র‌্যাভেন কাক, ঠোঁটে রক্ত, উসিমুসি বুক ? তৃতীয় কি টেকুমেশ চিফ ?
যিনি বলেছেন : কোয়াও-বোচি ওয়ে-আউ ফি ( এই সুন্দর পৃথিবী )

বুৎ ওয়া তে ওয়া ( হায় ) ওয়াও-কোয়ন-অগ ( স্বর্গ )
সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে এই শাদা লোকগুলো

ওদের জীবনে কোনো প্রেম নেই, শুধু হিংসা, হত্যা, লোভ
অ্যানা, হাত ধরে নিয়ে চল রেডিন্ডিয়ান প্রেমিকের

তাঁবুর সুগন্ধে, মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, উসিমুসি বুক
সবকটা কালোচুল বেছে দিবি, কোলে মাথা নিয়ে, অ্যানা, অনামিকা

আবার তোর সঙ্গে কবে দেখা হবে, ক্যামেরা মুখের কাছে এনে
তোর হাঁ-মুখের দেখবো চটুল বিশ্বরূপ ! অ্যানা দি র‌্যাভেন ?

বদনাম হবার জন্য তৈরি হ, চল তোকে কুখ্যাত কুসঙ্গে নিয়ে যাই
তোর স্বর্গে ছেটাই খানিক এই প্রেমিকের নারকীয় করোটির ছাই




সোনালী চক্রবর্তী অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা

ব্যথা জখমকে ভালোবাসে -- মাংসকে ভালোবাসে ব্যথা --
সাধু হয়ে গেছি তো, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই
বাড়িতে ল্যাংটো ঘরে বেড়াই -- পোড়ানো পাণ্ডুলিপির গন্ধ মেখে
ভালোবাসাকে ভালোবাসি -- অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ --
সুরের নোনতা খসড়া বাঁধি -- স্মৃতি দাও -- স্মৃতি দাও --
উজবুক তাকাই ঈশ্বরীর ডিজিটাল অনুপস্হিতির ফ্রেমে
নিকেলিত পূর্ণিমা, বেচারী ঈশ্বরী কেন এতো সুন্দরী !
অবচেতনার খলিফার ফতোয়া -- আস্তিক হয়ে যা শিগ্গিরি --
হায় -- ঈশ্বরী তো নিজেই নাস্তিক --
বোকা না কি -- সোনার হরিণ কেই বা চায় ?
লাভার ফুটন্ত বিছানায় -- খদিরচুল রূপসী -- নিঃসঙ্গতা আর বঞ্চনা --
আব্রাহামের তিন ছেলের রক্ত আমার গায়ে কেন ?
আমি তো ল্যাংটো খলিফা, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই--
পঞ্চবটির হাইপাররিয়াল জঙ্গল তোকে ঘিরে
ভবঘুরে -- কুঁজোশঠ -- নুলো -- টোটোবেকার -- খোচর --
নাঙবুড়ো -- লোফার -- নেশুড়ে -- মিথ্যুক -- জুয়াড়ি -- বেয়াদপ --
রাজনর্তক -- জ্যোতিষী তোর বাঁহাত কখন থেকে ধরে রেখেছে --
তুই তো এই শহর -- রাজপথ -- রাস্তা --লেন -- বাইলেন --
শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না
ব্যথায় ঢালাই নিজেরই গড়া আদল -- সেই যুবক তো ? চিনি আমি !
সে তোর মাংসে ব্যথার মতন আঁকড়ে থাকেনি -- যেমন আমি --
যখন সময় আসবে -- গায়ের সমস্ত পালক -- মখমল -- স্টিলেটো --
ভুরু কোঁচকানো জাদু -- তোর হাতে বটল ওপনার কেন ?
আমি তো সাধু হয়ে গেছি, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই --
বাড়িতে ল্যাংটো ঘুরে বেড়াই -- প্রতিবেশিনীদের প্রিয় উন্মাদ --
সত্যের দপদপানিতে ঘায়েল -- চোখ বুজি -- একদিন তো সব যাবেই --
এখন নয় কেন ? খদিরচুল রূপসী ? তুই চাস নাকি সোনার হরিণ ?
বিশ্বাস করিসনি -- ভয় পাসনি -- যা হয়নি তা তোর নাগালে -- চেষ্টা ছাড়িসনি
ব্যথা মাংসকে ভালোবাসে -- আঘাতকে ভালোবাসে ব্যথা --



কৃতি ঘোষ অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা

এই সেই গালফোলা যুবতী
যাকে তার বাবা ডাকে ডাবলিউ
রোদের সঙ্গে ষড় করে যে
আমার ছায়াকে ভাঙেচোরে সে
সিগ্রেট ফোঁকে বলে চুমু ওর
খাওয়া এক বাসি কার্ড এটিএম
পিন ওর দুই চোখে মিচকায়
ইস্তিরি-করা মোর ভজনা
আমি ছিনু সতেরোশো শতকে
ও রয়েছে বাইশের কোঠাতে
যা নিয়েছি ফেরত দেয়া যাবে না
উকুনের সাথে চুলে পুষেছি
মৎস্যবালিকা যার বুকে আঁশ
ও আমার পিন-আও পোস্টার
নদী ওর ঘাম ছাড়া বয় না
প্রেমিকেরা কারাগারে বন্ধ
ফোলাগাল ছুঁই ফেসবুকে রোজ
চুমু খাই সিগ্রেটি ঠোঁটে ওর
আমার কান দুটো কুমিরের
গিটার বাজিয়ে ডাকে আয় আয়
ও আমায় নিলামেতে কিনেছে
এক টাকা পঁয়ত্রিশ পয়সায়
চেন বেঁধে পথে-ঘাটে নিয়ে ঘোরে
তবু বলে তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয় আয় আয়


অবন্তিকার শতনাম

আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়...ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে...বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী...বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে...ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ...ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই...ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই...যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়...প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়...পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না...যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম...অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো...পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই...কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য...তাহলে ভগাঙ্কুরের...ও বলল সেটা আবার কি জিনিস...ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো...পান্তুয়া চলবে...ধ্যুৎ...রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়...ছানার পায়েস...নারকেল নাড়ু...রসমালাই...নকশি পিঠা...রাজভোগ...লবঙ্গলতিকা...হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়...আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা...ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে...হ্যাঁ...এগোই...পাছার কি দুটো নাম হবে...ডিসাইড কর...ডিসাইড কর...তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না...না না ফের ফের...লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী...পারফেক্ট হয়েছে...তাহলে পাছার একটাই নাম দিই...নরম নরম কোনো নাম...পাসওয়র্ড...ঠিক...এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড...ধ্যাৎ...পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস......গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন...ছিঃ...তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি...গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে...ওক্কে...তারপর...ঘুমোবো কখন...বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া...ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া...রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না...ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে...শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে...না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়...ছাড় ছাড়...এগো...মানে নামতে থাক...তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো...তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ...বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ...এবার ওপরে আয়,,,মুখে...ঠোঁট...ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি...আচ্ছা...ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি...ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো...খাস...থুতনিতে সেকেন্ড চিন...পিৎজা কোক খাওয়া থামা...থুতনির নাম দিই গোলাপজাম...কেন কেন কেন...পরে বলব...এখন দুচোখের নামদিই...শতনাম হলো না তো...চোখ বোজ চোখ বোজ...তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার...তাহলে আয়...আজ তুই ওপরে না নিচে ?

নেভো মোম নেভো

আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালো
ফিল্মে দেখেছি, আগুন নগ্নিকা, বুক দুটো অতো ছোটো কেন
দুঃখ হয় নাকি ? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে
হত্যা করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকলেন, নয়তো বুক উঁচু করে বলতেন
যা করি তা কারি, প্রেত তোর তাতে কী, তুই কি ঘুমের ইন্দ্রজালে
শুধু বুক খুঁজে বেড়াস নাকি ! সত্যিই তাই, আপনার ঘুমে ঢুকে
তাছাড়া কি খুঁজবো বলুন ? ফেরার ট্যাক্সিভাড়া ? গ্যাসের রসিদ ?
যা ইচ্ছে করুন আপনি, জেনে নেবো, চলন্ত গাছেরা বলে দেবে,
না জানলেও আকাশ তো ভেঙে পড়ছে না ; আপনি আমার প্রিয় নারী,
মন খারাপ করে দিলেন আজকে বৃষ্টির দিনে, ছাতাও আনিনি,
আপনার পাশ দিয়ে যেতে-যেতে ছাতার আড়াল থেকে আপনার
ছোট্টো দুটো বুক জরিপ করে নিতে পারি, ব্র্যাঙ্কোর প্রেত আমি,
ছোরা দুটো নিলেন দুহাতে তুলে, মনে হয়েছিল বুকের গরবিনি, হত্যা
নেহাতই অজুহাত, কেউ তো আর মনে রাখবে না, উনিও জানেন
তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল, না না, হাঁ-মুখের ঠোঁটে নয়
পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি হওয়া, যেন ইস্কাপন
নষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি, যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না
খুলে বলি আপনাকে, আমি কীরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন,
যেমন ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে খুঁটে পড়ে
আমার ভেতর সেরকমই পোষা আছে কয়েকটা অসুখ
বুঝলেন, যখন প্রথম পড়ি, প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন আপনার !
লেডি ম্যাকবেথ ! আহা কি শঙ্খিনী নারী, কি ডাগর রক্তময়ী চোখ
ঘুমন্ত হেঁটে যাচ্ছো মৃত্যুর মসলিনে সম্পূর্ণ পোশাকহীন, কোনো খেয়াল নেই,
চেয়েছি জড়িয়ে ধরতে, বলতে চেয়েছি, লেডি, লেডি, নগ্ন পশ্চিমে
একটা চুমু শেষবার দাও, পুরস্কার নিয়ে ডাইনিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে
রক্তাক্ত ছোরার সঙ্গে কথা বলো, বুকের নির্দয় ওঠা-নামা, লেডি
ম্যাকবেথ, ওই যিনি ছোটো বুকে মনটা খারাপ করে ফিরছেন বাড়ি
ওনাকে উৎসাহিত করো, বড়ো, আরবের সমস্ত আতর ধুতে পারবে না
হত্যার মিষ্টি গন্ধ, যেমনই লোক হোক সে তো তার নিজস্ব দৈত্যের সৃষ্টি,
তেমন নারীও, আত্মজীবনীতে লিখবেন কিন্তু প্রথম হস্তমৈথুনের স্বাহা
ক্লিটোরিসে অঙ্গুলিবাজনার মৃদু উগরে-তোলা ঝর্ণাঝংকার
আপনার নগ্নতার ব্যক্তিগত ছন্দ লেডি ম্যাকবেথের মতো হাঁটছেন
কলকাতার রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমাকে চিনতে পেরেছেন ?
আমি ব্যাঙ্কোর প্রেত, প্রতিটি হত্যাদৃশ্যে উপস্হিত থেকে
বুকের বর্তুলতা মাপি, যবে থেকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে দুরূহ লেগেছিল
লেডি ম্যাকবেথের লোভ সিংহাসনে রাজমহিষীর মতো উঁচু বুকে
বসে আছো, স্কুল-ফেরত সম্পূর্ণ উলঙ্গ তুমি হাঁটছো পাশাপাশি
ঘুমন্তকে নয়, ঘুমকে খুন করেছিলে তুমি, চিৎকার করছিলে
'কে জানতো বুড়ো লোকটার গায়ে এতো রক্ত এতো রক্ত ছিল !'
এসবই আপনার নারীত্বের রক্ত, ছোট্টো দুটো বুকের দুঃখের
ভাববেন না বেশি, যৌবন ফুরোবার সঙ্গে এই দুঃখ চলে যাবে
তখন দেখবেন ক্লিটোরিস সাড়া দিচ্ছে না, রসশাস্ত্রহীন দেহ
আদিরস প্রথমে লোপাট, ঘুমন্ত হাঁটবার আহ্লাদ নামছে দুঃস্বপ্নে
আপনার ছোট্টো বুক ছোট্টোই থেকে যাবে যতোই উদার ওন
ভিখিরি দেখলেই বটুয়াতে কয়েনের ওজন কমান, লেডি ম্যাকবেথ
ছাড়বে না, উচ্চাশার কি দুর্দশা, হাতে রক্ত, নেভো মোম নেভো

কপিরাইট

অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা
পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে
লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি
চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে
ম্যাজেন্টা-গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে
গুনেগুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান
কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।

অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা
এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল
কিন্তু দুজনেই এর-তার কাছে থেকে
শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে
ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা
ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই ।

প্রজাপতি প্রজন্মের নারী তুই চিত্রাঙ্গদা দেব

রবীন্দ্রনাথ, এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না।
চিত্রাঙ্গদা বলছিল আপনি প্রতিদিন
ওকে রুকে নিচ্ছেন, আপনাকে সাবান
মাখাবার জন্য, বুড়ো হয়েছেন বলে
আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে
ভয় পান, আর হাতও পৌঁছোয় না
দেহের সর্বত্র, চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা--
পোশাক খুললে, আসঙ্গ-উন্মুখ নীল
প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে
আর তারা আপনার লেখা গান গায় !

এটা আপনি কী করছেন ? আপনার
প্রেমিকারা বুড়ি থুতথুড়ি বলে কেন
আমার প্রেমিকাটিকে ফাঁসাতে চাইছেন !

নাচ মুখপুড়ি

নাচ তুই নাচতে থাক অবন্তিকা
উইখেকো গোরিলার ঢঙে
নাচতে থাক নাচতে থাক নাচ
কী হয় কী যে হয় তালে-তালে
আমি আছি তোর ঘামে নুন হয়ে
হাওয়ার সঙ্গে ট্যাঙ্গো
আলোর সঙ্গে ফক্সট্রট কিংবা
দোলানো পাছায় মাম্বো রুম্বা বুগি
পাসো দোবলে লিকুইড লকিং
বোলেরো জাইভ সুইং সকা
মুনওয়াক ফ্ল্যামেঙ্গো নাচে
কথা বলা বন্ধ রেখে
নিজেকে নাচাতে থাক ডি.জে.
আমি আছি তোর নাভি ফুটো করে
হালকা হলুদ পোখরাজে
অন্তর্বাসে আছি আলতো
সন্মোহিনী কটুগন্ধে
মোদো-ভাপ নিঃশ্বাসে
নখের পুরোনো ময়লায়
চুমুপ্রিয় গালের ফুসকুড়ি হয়ে
তেষ্টা-পাওয়া খসখসে ঠোঁটে
শ্লেষাত্মক হাসি হয়ে আছি
বুঝতে পারবি না মুখপুড়ি
কেননা তুই ঢঙি চিরকাল
কেবলই নেই নেই নেই নেই
নেই নেই নেই নেই করে
নেচে গেলি নেচে গেলি নেচে
ভাষার মাস্টার বোদা
করিয়োগ্রাফারের ইশারায়


পপির ফুল

বোঁটায় তোর গোলাপ রঙ অবন্তিকা
শরীরে তোর সবুজ ঢাকা অবন্তিকা
আঁচড় দিই আঠা বেরোয় অবন্তিকা
চাটতে দিস নেশায় পায় অবন্তিকা
টাটিয়ে যাস পেট খসাস অবন্তিকা

অন্তরটনিক

বিড়ি ফুঁকিস অবন্তিকা
চুমুতে শ্রমের স্বাদ পাই
বাংলা টানিস অবন্তিকা
নিঃশ্বাসে ঘুমের গন্ধ পাই
গুটকা খাস অবন্তিকা
জিভেতে রক্তের ছোঁয়া পাই
মিছিলে যাস অবন্তিকা
ঘামে তোর দিবাস্বপ্ন পাই

তোর বহির্মুখ, মুখপুড়ি

তোর বহির্মুখী দেহ, আদরক্লান্ত ঘামে, মুখপুড়ি মেছোমেয়ে
আলুথালু মরশুমে বেড়ে ও ফিকিরহীন, অপপ্রচারে, বুঝলি
জাহাজ ভাসাতে চাইছে পিম্পদের ঘোড়েল জোয়ারে ।
হাউ সিলি ! নো ? কী বলিস, ডারলিং, সুইটি পাই ?
তোর নাব্য নগ্নতা গ্লসি কাগজের চারু মলাটে হেলান দিয়ে
পুজো সংখ্যার মোটা বেহেডদের পাশে শুয়ে করছেটা কী ?
বল তুই ? তোর কোনো সে নেই ? বোবা না বধির তুই !
অলংকার-টলংকার বেচে খেয়েছিস জানি । বাড়ির কাঠামো
দেখছি ঝুলে গেছে দশ বছর বাদে-বাদে কিস্তি দিতে-দিতে;
হাউ স্যাড । চ্যাংড়া যারা জোটে তারা টেকে না কেন রে ?
বছর না যেতেই কাট মারে ! অথচ বডি তো সরেস আজও
অক্ষরের ধাঁচে জমে একেবারে টানটান আগাপাছতলা
কন্ঠের টিউনিঙও শ্বাসকে ফুরিয়ে ফ্যালে রাত বাসি হলে ।
বেশ্যার আলতামাখা গোড়ালি দেখবো ভাবিনি--- তাও
ব্যালেরিনা জুতোর আবডালে, ডারলিং, ঘামে-ভেজা
প্রণামের খাতিরে তুই কতরকমের ফাঁদ পেতে রেখেছিস !



পরমাপ্রকৃতি

মেঘের রঙ দিয়ে ছুঁয়ে দিস অবন্তিকা
চামড়া বাঘের ডোরা ধরে
হাওয়ার রেশম দিয়ে চুল আঁচড়ে দিস অবন্তিকা
মাথা বেয়ে ওঠে বুনো মহিষের শিং
ঝড়ের মস্তি দিয়ে পাউডার মাখিয়ে দিস অবন্তিকা
গায়ে ফোটে গোখরোর আঁশ
হরিণের নাচ দিয়ে কাতুকুতু দিস অবন্তিকা
ঈগল পাখির ডানা পাই
রোদের আঁশ দিয়ে নখ কেটে দিস অবন্তিকা
গজায় নেকড়ের থাবা হাতে-পায়ে
নদীর ঢেউ দিয়ে ঠোঁটে চুমু খাস অবন্তিকা
কাঁধে পাই রাবণের জ্ঞানীগুণী মাথা
বৃষ্টির ঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরিস তুই অবন্তিকা
হুইস্কির বরফ হয়ে যাই
গানের সুর দিয়ে চান করিয়ে দিস অবন্তিকা
ডুবে যেতে থাকি চোরা ঘূর্ণির টানে

নয়নিমা

ব্যায়াম করিস তুই অবন্তিকা, নরম গোলাপি ম্যাটে শুয়ে, মিহিমিহি
বাজনায় বডি তোর মৃদঙ্গ তালের ঢঙে ফুল-অন উরুকে ফোলায়
পা দুটো ওপরে ওঠে, উলঙ্গ সাঁতারু, আয়নার পারা গুঁড়োগুঁড়ো
ভাসাস সঙ্গীতে ধোয়া উড়ন্ত বকের ডানা, কাকে দিবি বলে
কাঁচা মাটি মাখছিস আঁটো সাঁটো লোভনীয় পাছাকে দুলিয়ে ?

মর মুখপুড়ি

এই বেশ ভাল হল অ্যামি, বিন্দাস জীবন ফেঁদে তাকে
গানে-নাচে মাদকের জুয়ার পূণ্যে অ্যামি, কী বলব বল,
অ্যামি ওয়াইন হাউস, অ্যামি, আমি তো ছিলুম তোর
জানালার কাঁচ ভেঙে 'ল্যাম্ব অফ গড'এর দামামায়
বাজপড়া গিটারের ছেনাল আলোয় চকাচৌঁধ ভাম,
অ্যামি, আমি তো ছিলুম, তুই দেখলি না, হের্শেল টমাসের
শিয়রে বিষের শিশি মাধুকরী লেপের নিঃশ্বাসে, অ্যামি
স্তনের গোলাপি উলকি প্রজাপতি হয়ে কাঁপছি, দেখছিস
লাল রঙে, অ্যামি, অ্যামি ওয়াইন হাউস, মুখপুড়ি
হ্যাশের ঝাপসা নদী কোকেনে দোলানো কোমর, চোখ
থ্যাবড়া কাজলে ঘোলা ঠিক যেন বাবার রিটাচ করা
খুকিদের নকল গোলাপি ঠোঁট বয়ামে ভাসাচ্ছে হাসি
সাদা কালো, হ্যাঁ, সাদা কালো, ব্যাক টু ব্ল্যাক গাইছিস
বিবিসির ভিড়েল মাচানে কিংবা রকবাজ ঘেমো হুললোড়ে
আরো সব কে কী যেন ভুলে যাচ্ছি ভুলে যাচ্ছি ভুলে...
ওহ হ্যাঁ, মনে পড়ল, ক্রিস্টেন পাফ...জনি ম্যাককুলোস...
রাজকমল চৌধুরী...ফালগুনী রায়...অ্যন্ড্রু উড...
সেক্স পিস্টলের সিড ভিশাস...দার্বি গ্রেস...অ্যান্টন মেইডেন...
সমীর বসু...শামশের আনোয়ার...কে সি কালভার...
হেরোইন ওভারডোজ, ছ্যাঃ, ওভারডোজ কাকে বলে অ্যামি
ওয়াইন হাউস, বল তুই, কী ভাবে জানবে কেউ
নিজেকে পাবার জন্যে, নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়বার জন্যে...
য়ুকিকো ওকাকার গাইতে গাইতে ছাদ থেকে শীতেল হাওয়ায়
ৱদু হাত মেলে ঝাঁপ দেয়া, কিংবা বেহালা হাতে সিলিঙের হুক থেকে
ঝুলে পড়া আয়ান কার্টিস, কত নাম কত স্মৃতি কিন্তু কারোর
মুখ মনে করা বেশ মুশকিল, তোর মুখও ভুলে যাব
দিনকতক পর, ভুলে গেছি প্রথম প্রেমিকার কচি নাভির সুগন্ধ,
শেষ নারীটির চিঠি, আত্মহত্যার হুমকি-ঠাসা, হ্যাঁ, রিয়্যালি,
নরম-গরম লাশ, হাঃ, স্বর্গ নরক নয়, ঘাসেতে মিনিট পনেরো
যিশুর হোলি গ্রেইল তুলে ধরে থ্রি চিয়ার্স বন্ধুরা-শত্রুরা,
ডারলিং, দেখা হবে অন্ধকার ক্ষণে, উদাসীন খোলা মাই,
দু ঠ্যাং ছড়িয়ে, একোন অজানা মাংস ! অজানারা ছাড়া
আর কিছু জানবার জানাবার বাকি নেই, অ্যামি, সি ইউ...
সি ইউ...সি ইউ...সি ইউ...মিস ইউ অল...

সবুজ দেবকন্যা

ওঃ তুই-ই তাহলে সেই সুন্দরী দেবকন্যা
তুলুজ লত্রেক র‌্যাঁবো ভেরলেন বদল্যার
ভ্যান গঘ মদিগলিয়ানি আরো কে কে
পড়েছি কৈশোরে, কোমর আঁকড়ে তোর
চলে যেত আলো নেশা আলো আরো মিঠে
ঝলমলে বিভ্রমের মাংস মেজাজি রঙে
বড় বেশি সাজুগুজু-করা মেয়েদের নাচে
স্পন্দনের ছাঁদ ভেঙে আলতো তুলে নিত
মোচড়ানো সংবেদন কাগজে ক্যানভাসে

অ্যামস্টারডম শহরের ভিড়ে-ঠাসা খালপাড়ে
হাঁ করে দেখছি সারা বিশ্ব থেকে এনে তোলা
বিশাল শোকেসে বসে বিলোচ্ছেন হাসি-মুখ
প্রায় ল্যাংটো ফরসা বাদামি কালো যুবতীরা
অন্ধকার ঘরে জ্বলছে ফিকে লাল হ্যালো
এক কিস্তি কুড়ি মিনিট মিশনারি ফুর্তির ঢঙে
পকেটে রেস্ত গুনে পুরোনো বিতর্কে ফিরি
কনটেন্ট নাকি ফর্ম কোনটা বেশি সুখদায়ী
তাছাড়া কী ভাবে আলাদা এই আবসাঁথ ?
যুবতী উত্তর দ্যান, শুয়েই দ্যাখো না নিজে
এই একমাত্র মদ যা বীর্যকে সবুজ করে তোলে।

ম্যালেরিয়া

দেখলি তো অবন্তিকা
মশা বধুরাও তোর
প্রেমিকগুলোর রক্ত চেনে!
মেঝেয় ছড়ানো তোর
গুঁড়ো গুঁড়ো মুখচ্ছবি
উড়িয়ে পড়েছে সটকে
তোর যত পার্টটাইম
সুবেশ ডিউড দল ।
জ্বরদেহ চাইছে রে
জড়িয়ে ধরুক তোর
গা-ময় ছড়ানো শীত
নিভিয়ে ফেলুক কেউ
তাপের স্হানিক নিম
শুকনো ঠোঁটের শ্লেষে
যা তুই চিরটাকাল
আমারই জন্য শুধু
রাখলি ঘুমের ভানে--
এরম ব্যবস্হা ভালো
অন্তত তাহলে শুধু
আমার কাছেই পাবি
জ্বরের বিকল্প রোগ।

শরীর সার্বভৌম

জরায়ুটা বাদ দিয়ে অমন আনন্দ কেন অবন্তিকা
তাও এই গোরস্হানে দাঁড়িয়ে গাইছিস তুই
মৃত যত প্রেমিকের গালমন্দে ঠাসা ডাকনাম
যারা কৈশোরে তোর বিছানার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে
ভুতুড়ে কায়দায় ঝুঁকে প্রেম নিবেদন করেছিল ?
তারপর তারা সব একেএকে লাৎ খেয়ে বিদেয় হয়েছে
অন্য যুবতী ফাঁসতে যাদের জরায়ুপথ বীজ শুঁকলেই
কয়েক হপ্তায় ফুলে ওঠে। সেসব মহিলা কিন্তু আনন্দই পেতো
এই মনে করে যে দেহটা তো সার্বভৌম ; মন বা মনন নয়,
মন না চাইলেও দেহে খেলে যায় ওগরানো তরল বিদ্যুত
যা কি না ভালো খারাপের ঊর্ধ্বে। ঠিকই বলেছিস তুইও
শরীরই সার্বভৌম...


প্রিয়াংকা বড়ুয়া অবন্তিকা

প্রিয়াংকা বড়ুয়া তোর
ঠোঁটের মিহিন আলো
আমাকে দে না একটু

ইলেকট্রিসিটি নেই
বছর কয়েক হল
আমার আঙুলে হাতে

তোর ওই হাসি থেকে
একটু কি নিভা দিবি
আমার শুকনো ঠোঁটে

যখনি বলবি তুই
কবিতার খাতা থেকে
তুলে দিয়ে দেব তোকে

আগুনও আছে নাকি
তোর দেহে কোনো খাঁজে
চাইতে বিব্রত লাগে

জোনাকির সবুজাভ
আলো থাকলেও চলে
দে না রে একটুখানি

ঠোঁট যে শুকিয়ে গেছে
প্রিয়াংকা বড়ুয়া দ্যাখ
কবিতা লেখাও বন্ধ

তোর দেয়া কবেকার
অন্ধকারে এখনও
হাতের আঙুল ডুবে

উৎসব

তুই কি শ্মশানে গিয়েছিস কখনও অবন্তিকা ? কী বলব তোকে !
ওহ সে কী উৎসব কী আনন্দ, না দেখলে বুঝতে পারবি না--
পাঁজিতে পাবি না খুঁজে এমনই উৎসব এটা । কফিতে চুমুক দিই।
আগুনকে ঘিরে জিন্স-ধুতি-প্যান্ট-গেঞ্জি মেতে আছে ননস্টপ
মিচকে আগুন তেড়ে নাচছে আনন্দ খেয়ে, ধোঁয়ার বাজনা
শুনে কাঁদো-চোখে যারা সব অংশ নিতে এসেছে তারাও মজা
শেষে শেয়ার বাজারে কী উঠল কী নামল আবার ট্যাকসি
ধরে ছোটো নিরামিষ কেনাকাটা পুরুতের দেয়া লিস্টি মেনে--
চলিস শ্মশানে কাঁধে চিপেস্ট পালঙ্কে শুয়ে লিপ্সটিক মেখে...
নিয়ে যাব একদিন সবাই প্রেমিক মিলে কাঁধের ওপরে ডারলিং...

তোর সুগন্ধ, মুখপুড়ি

ঠিকই বলেছিলি, মুখপুড়ি, থাকুন না সঙ্গে সবসময়, কোঁকড়া দুর্গন্ধ হয়ে
দেহের নৌকো জুড়ে, আগাপাশতলা, নোনা বাঁকে মাছেদের অপলকা ঝাঁকে
কোথাও অ্যাড্রেনালিনে নীল তাঁতে বোনা গোড়ালি-গন্ধকে মাখা ভিজে-নাচ
চামড়ায় মরে-যাওয়া জং-ধরা হাঙরের মিষ্টি হাঁ-মুখ ভরা খিলখিল আলো
খুঁজুন না যা চাইছেন, ভিনিগারি ঘামের রোদ্দুর, গ্রন্হিল জ্বরের নিঃশ্বাস
ছানাকাটা দুধেল উত্তাল, তাও হরমোনের তরল বারুদে তিতকুটে
বলেছিলি তুই, প্রেম ? ছ্যাঃ, সুগন্ধ তো বানানো নকল তার সাথে, ডারলিং
মাংসের মেদের মজ্জার আত্মীয়তা নেই। পেতে হলে শুধুই দুর্গন্ধ নিতে হবে
যা তোর একান্ত আপন, বলেছিলি। চারিপাশে বাতাসের নিভাঁজ জারকে
তোর ওই ঘোষণা উড়ছে: সি ইউ... সি ইউ... সি ইউ... সি ইউ...

ফেলে গিয়েছিস তোর লনজারি টপ জিন্স বক্ষবন্ধনী হাইহিল। কই তোর
দুর্গন্ধ কোথাও তো নেই মুখপুড়ি ; ফেলে-যাওয়া কিছুতেই নেই। সবই
ভিনিভিনি খুশবু মাখানো। যতক্ষণ ছিলি, তোর গা থেকেও ওই একই
পারফিউম উড়েছে, বানানো নকল, তোরই মতন মুখপুড়ি, কথার
ফেনানো জালে টোপ বেঁধে যা তুই ফেলেই চলেছিস প্রতিরাত প্রতিদিন।
তাহলে ফালতু তোর সি ইউ...সি ইউ.. ডাক হাতছানি উদোম ইশারা।

শুদ্ধ চেতনার রহস্য

ঠিক আছে, লাফাও
অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম কাচের জানালা খুলে কুড়ি তলা থেকে
বাতাসে ঝাঁপাও তুমি টাঙাইল আঁচল উড়িয়ে
শূন্যে ভাসবে কালো ঢাল এলোকেশ
দু পায়ে আচেনা নাচে পৃথিবীর রঙিন মাটিতে
নেমে এসো তুমি
তখন খামচে দেখো হাওয়ার শরীর কীরকম
খেলবে তোমাকে নিয়ে ওলোট-পালোট
আমার পায়ের কাছে পড়ে তুমি ছত্রখান হও
খণ্ড-বিখণ্ড হাড় থ্যাঁতা মাংস নাড়িভুঁড়ি সব একাকার
ঠোঁট যোনি উরু নাভি পাছা স্তন আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে
সৌন্দর্য বিমূর্ত ক্বাথে মাছির খোরাক হবে তুমি

সব জড়ো করে তবু তুমি নও
তুমি সে-সময়ে রৌদ্রে ভাসমান
বুঝেছিলে মিথ্যে এই প্ররম্ভিক অধঃপতন ।

২১ আষাঢ় ১৩৯২

শিল্পোন্নয়ন

এ কী তুমি এইখানে পাগলাগারদে
পায়েতে শেকলবাঁধা নেয়ারের খাটে
উদোম উলঙ্গ শুয়ে আছো চুলে জট
নোংরা নক বেড়ে গেছে দুচোখে ঢুলুনি
সারাঘর বমি মুত পায়খানা ভরা
ভাতমাখা এনামেল থালা এককোণে
শরীর ধোওনি জলে নেমে কতদিন
চেনাই যায় না এককালে পাঁচতারা
হোটেলে নেচেছ নাভি নিতম্ব কাঁপিয়ে

আরেকবার সুস্হ হও শুভ্রা রায়
নাচব সকলে তুর্কি গাঁজা-ভাঙ টেনে
হাড়িয়া মহুল খেয়ে ফিরিঙি আদলে
উঠে এসো সুর্মা চোখে লুপুঙগুটুতে
বেবাক দুনিয়া যায় জাহান্নমে যাক ।

২১ শ্রাবণ ১৩৯২

বিজ্ঞানসন্মত কীর্তি

ফ্যান টাঙাবার ওই খালি হুক থেকে
কন্ঠে নাইলন দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়ো
কপাট ভেজিয়ে দরোজার চুপিসাড়ে
উঁচুতানে রেডিও চালিয়ে তাড়াতাড়ি
শাড়ি শায়া জামে খুলে টুলের ওপরে
দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁস-রশি পরে নিও
সারারাত অন্ধকারে একা ঝুলে থেকো
চোখ ঠিকরিয়ে জিভ বাইরে বেরোনো
দুপাশে বেহঁশ দুই হাত আর স্তন
জমাট ষোড়শি শূন্য পায়ের তলায়
পৃথিবীর ধরাছোঁয়া ছাড়িয়ে যেখানে
বহু পুরুষের ঠোঁটে আদর খেয়েছ
সে-শরীর ছুঁতে ভয় পাবে তারা আজ

দোলো লাশ নামাবার জন্য আছি আমি ।

১৯ শ্রাবণ ১৩৯২

সুফিয়ানা

এ কেমন ক্রিমতোলা বাংলায় কথা কোস তুই
যে ভেলকিবাজ রোদের ভয়ে ঝরে পড়া শিউলিফুলগুলো
পাখিদের রোমান্টিক গানকে নার্ভাস করে তোলে
যেন হাঁ-মুখে নার্সের থার্মোমিটার

দোলের দিন ডেকে-ডেকে হাঁপানি ধরে গেল কোকিলটার
আসলে তোর কেন মতামতহীন হবার আধিকার নেই
একটা হ্যাঁ-এর সঙ্গে একটা না মিশিয়ে তখনই জানা যায়
যখন প্রেমের ক্লাইম্যাক্সে মাটির সঙ্গে আমি যোগাযোগ হারাই
শাঁতার কাটবার মতন তোর গভীর টলটলে সংলাপে
যে-দিন জিরে-জিরে করে কুচোনো বিদ্যুতের সবুজ জোনাকি
ঘোড়াহিন রেসের মাঠে তোকে ঘিরে বেশরম হ্রেষা হয়ে উড়বে
ইরানি হরফে তোকে প্রেমপত্র লিখে রাখবে বটগাছের শেকড় ।

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০১

দালাল

এ কী কুলনারী তুমি জাহাজঘাটায় দেহ বেচতে এসেছো
লুঙি-পরা পানখোর দালাল রাখোনি
সাদাপোষাকের কবি শরীর ঝাঁঝরা করে দেবে
শাঁখা-নোয়া খুলে তারা দুহাত হিঁচড়ে টেনে তুলবে লরিতে
লকাপে ল্যাংটো মাঝরাত.....সে-সময়ে গেয়ো তুমি রবীন্দ্রসংগীত

ছিহ কুলখুকি তুমি সবায়ের আদর কুড়োও
যারতার সাথে গিয়ে যেখানে-সেখানে শুয়ে পড়ো
চারিদিকে কটাচোখ ধ্রুপদী জোচ্চোর সব নজর রাখছে মনে রেখো

আমি তো স্ট্রেচারবাহী কিছুই করতে পারব না
হয়তো টিফিনবাক্সে এনে দেব রুটি আর আলুজিরে ভাজা
গান শোনাবার মাঝে ঝুঁকে-ঝুঁকে পয়সা কুড়োবো
ভোর হলে গঙ্গার পাড়ে তুমি দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বমি কোরো
হাসপাতালেতে পাবে বেডপ্যান গ্লুকোজ বোতলে জল
তালচিটে বিছানায় পাশে শোয়া ঘুমন্ত কুকুর ।

১৭ অঘ্রাণ ১৩৯২

বজ্রমূর্খের তর্ক

আজকে শুক্কুরবার । মইনে পেয়েচি । বোধায় শরতকালের পুন্নিমে ।
পাতলা মেঘের মধ্যে জোসনা খেলচে । মাঝরাত । রাস্তাঘাট ফাঁকা ।
সামান্য টেনিচি তাড়ি । গাইচি গুনগুন করে অতুলপ্রসাদ ।
কোথাও কিচ্ছু নেই হঠাত নেড়ি-কুকুরের দল
ঘেউ ঘেউ করে ওঠে । তাড়া করে । বেঘোরে দৌড়ুতে থাকি ।
বুঝতে পারিনি আগে । রাজপথে এসে হুঁশ হয় ।
মাইনেটা পড়েচে কোথাও হাত থেকে । কী করে ফিরব বাড়ি ?
কেধ তো বিশ্বাস করবে না । ভাববে খেলেচে রেস,
গিয়েচে মাগির বাসা, বন্ধুদের সাথে নিয়ে বেলেল্লা করেচে ।
বন্ধুবান্ধব কেউ নেই । রেসও খেলি না কতকাল ।
অন্য স্ত্রীলোকের খোলা-বুকে হাত শেষ কবে দিয়েচি যে
ভুলে গেচি । জানি না বিশ্বাস করে না কেউ কেন ।
আমার তো মনে হতে থাকে, যা করিনি সেটাই করিচি বুঝি ।
যা কইনি, সেকথা বলিচি । তাহলে এ পুন্নিমের মানে ?
কেন এই মাইনে পাওয়া? কেন গান ? কেন তাড়ি ?

আবার ঢুকতে হবে রামনোংরা গলির ভেতরে । নির্ঘাত কুকুরগুলো
গন্ধ শঁকে টের পাবে । ছেঁকে ধরবে চারিদিক থেকে ।
যা হবার হয়ে যাক । আজ শালা এস্পার কিংবা ওস্পার ।

২৭ আষাঢ় ১৩৯২

প্রিয়তমার নিলাম

বিশল্যকরণী বলে কিছু নই শেষ ওব্দি লক্ষ্মণের লাশ
রাবণের মর্গে পড়ে ভেটকে উঠেছিল
ভিড়ের দড়ির টানে
খর্ব অপুষ্ট জরাক্লিষ্ট মুখে কাঠের জগড়োনাথো ফিরেছে স্বস্হানে
ওরকম মুখ বুজে থাকব বলে আসিনি এখানে আমি
গন্ধমাদন কাউকে ল্যাজ তুলে আনতে হবে না
কেননা ভূমিষ্ঠ হয়েই মাটি কামড়ে ধরেছি কষদাঁতে
শীতকালে কেন ফিকে ন্যাপথালিনের গন্ধ মানুষীর নিশ্চুপ স্তনে
যে-মুখে রেখেছি হুল লেহনে বোটকা স্মৃতি বৃক্কে নেমে যাবে
ফেরারির অগ্নিচোখ অর্জন করেছি শ্রমে
বল্লম ধরার আগে আঙুলের খাঁজ হেজেছিল
বাতাসে বাবরি উড়বে চ্যাঁচাব দুখাঁধ তুলে
বুকের ওপরে দুই হাতা ঘুষি আছড়ে বলব বারবার
অগ্নি সংযোগ করো শান্তিভঙ্গ হোক ছারখার করো
ক্রন্দনরত কারা গুঁড়ি মেরে এলোচুলে ঘোর অন্ধকারে
শানাচ্ছে কুখরির ডগা উল্কাপাথরে ঘষে একটানা সুরে
টিকটিকিদের ল্যাজ আছড়াবার ক্ষীণ শব্দ
ঝড়ের ধুলোয় নাকে জ্বালা ধরে
মুখেতে রুমাল বেঁধে নিঃশব্দে ঘোড়া থেকে নামি

যে-রকম কথাছিল আবার এসেছি আমি নিলামের দাক দিতে
এইবার সবচে বেশি দাম ধরে দেব
মাত্র দু-পাঁচশো নয় কিংবা মাসখানেকের জন্যে ঘানির মজুরি
তুমি ধ্বংসধ্বনি খুকি
ভবিষ্যৎ থকথকে হারামরক্তে ডুবে আছে ।

১১ বৈশাখ ১৩৯২

বাজারিণী

য়িশ বছরের পর এলে তুমি । তোমার আদুরে ভাষা পালটে গিয়েছে
বারবার । জানি তুমি শুভ্রা রায় নও । ওরকমভাবে একঠায়ে
সারাদিন মাথানিচু করে বসে থাকো । আমার চুলেতে পাক
ধরে গেছে । শেখাও তোমার ভাষা এইবার । দেখি কীরকম
ঠোঁট নড়ে । না্ভি খিল-খিল কেঁপে হেসে কুটি হয় । যুবকেরা
ঘিরে থাকে বহুক্ষণ তোমায় আড়াল করে । কিসের কথা যে এতো হয়
কিছুই বুঝি না । অন্তত কুড়ি বছরের ছোট হবে তুমি ।
জানি না কাদের জন্যে অন্ন আনাজ সংগ্রহে আজ এলোচুলে
নেমেছ বাজারে । লুবাতাসে রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাবে শেষে ।
তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কী্যাবে বাসায় ফেরো ? ওই যুবকেরা
ছাতা ধরে মাথার ওপরে? বাড়ি ফিরে ভিজে চুল বোধহয় শোকাও একা ।
সকালে কি রান্না করে আসো ? সেগুলোই রাতে খাও?
শরীর খারাপ হলে কারা দ্যাখে? কে কাপড় কাচে?

আমার সন্ত্রাসবাজি রাহাজানি লুটমার থেকে জানি তোমার দুনিয়া
আলাদা একদম । তোমাকে নিজের নাম বলতে পারি না আমি ।
যদি ঘেন্না করো । জেনে যাও কী-কী করি, ভয় পাও ।
কতদিন ইচ্ছে হয় সামান্য ইশারা করে আমার দলের লোকেদের
তোমাকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিতে বলি ।
দাঁড়াবে আমার সামনে এসে তুমি । বলবে, 'আমাকে যেতে দিন' ।

২৮ আষাঢ় ১৩৯২

বাকদানো

তোদের তো বলিছিলুম বাবা কিন্তু তোরা গা কল্লিনে
তবলা-বাজিয়ের কানে আওয়াজের আগেই য-ভাবে বোল ফোটে
অ্যাগবারে তেমনিই য-দিকে মাথা করে শুই সে-দিকেই কেন সূয্যি ওঠে জানিনা

আমাদের যুধিষ্ঠির, সেই যে, পাশাখেলার গ্র্যাণ্ডমাস্টার
বেতলা ফরেস্টে দ্রোণাচার্যের সেমিনারে অর্জুনকে ধাতানি দিয়েছিল
'পা নাচিয়ে কক্ষুনো নাচবিনে, সব্বোদা বাতাস নাড়িয়ে নাচবি'

তোদের ওদিকটায় তো সভ্যতা মানেই শহর, কী, ঠিক বলিচি না?
জ্বরের ঘোরে-বলা প্রলাপগুলো খানিক পরেই দেখবি তথ্য হয়ে গেচে---
কাব্যি করে বলতে হয়, 'ওগো এ যে গোঁজবঙ্গের পালতোলা শামুক ভাসিয়েচো'

যখুন দুঃখকষ্ট চেপে যেতে শেখার বয়েসে পৌঁছোলুম, অ্যাঁ
ঘুমন্ত অবস্হায় যে-পাখিটা বিপদে পড়েচে তার মাঝরাতের ডাকে
দেহের বিতর্কিত জায়গায় হাত দিয়ে ফেলার ভয়ে আমি তো থরহরি

বিড়ির শেস-ফুঁকের আয়েস টেনে মেয়েটি যখুন পোনয় নিবেদন কল্লে
একাধটা অঠ্গকে বিশ্বেস করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল রে
তা, সবাই তো আর সবায়ের ব্যথার গন্ধ টের পায় না

এ-বাড়ির ঘড়িগুলোকে দ্যাখ, বড্ড অধীর, সবুর করতে পারে না;
কী করি ? আমি তো পাহাড় থেকে ঝাঁপ-দেয়া ঝর্ণার ফূর্তি দুমুঠোয় পুরে
মৌমাছিদের রানিটাকে নিয়ে বরযাত্রীদের সঠ্গে চুপচাপ কেটে পড়লুম...

১১ আগস্ট ২০০০

পরবর্তী সর্বনাশ

পাহাড়ের বাঁকে ট্রেন দেখা গেছে যাও
এইবালা ঘুমে অচেতন গৃহস্হালি
ফেলে ছোটো মাথা পেতে দিতে রেলপথে
এরপর রাতে আর কোনো ট্রেন নেই
পিষে কেটে ছটুকরো হয়ে যাও তুমি
শাঁখা পলা গুঁড়ো হয়ে মিশুক মাটিতে
তলপেটে রাখা ভ্রুণ নিসর্গে ফিরুক
ত্রেনের পয়ার ছন্দে নিজেকে ভুলিয়ে
তোলপাড় করে দাও সুখের সংসার
ভয় দুঃখ শোক গ্লানি দিয়ে বন্ধ করো
অমল আনন্দ শেষ হোক ভাঙা ঘুমে

দুহাত বাড়িয়ে সারারাত রেলপথ
শিশির উপেক্ষা করে তোমার শরীর
পাবে বলে ঠায় জেগে আছে সন্ধে থেকে

২০ শ্রাবণ ১৩৯২

স্হানিকতা

যে-মানুষীর হনুমানের ঢঙে চার হাতে জড়িয়ে ধরার তল্পিতল্পা ছিল
তার সঙ্গেই তো ধুপকাঠি-গেঁথা পাকা-কলার কুচকুচে পিঁপড়ে পাড়ায়
অন্ধকার দিয়ে নিজের বদূরত্বটুকু বেঁধে রাখতে চাইছিলুম

ওকে পেয়েছিলুম ছোটবেলার চান-করার হল্লায় তৈরি বিয়েবাসরে
মেঘ থেকে বৃঢ়্টিফোঁটা খুঁটেখুঁটে ঘাম জমিয়ে তুলত মুখময়

গৌড়ের সেসব ভুলভাঙা রাজপথ তো এখন অচেনা খেতসবুজ গ্রাম
মিটকি মেরে পড়ে আছে আলোর ঝলকানিতে টোলখাওয়া বিদ্যুতে
কেননা ইতিহাসে ঢুকতে গিয়ে চৌকাঠে ঘা খেয়ে ওর মাথা ফেটে গেছে

হয়তো একদিন তিলোত্তমাদের ফেলে দেয়া তিলগুলো জড়ো করে ফেলবে
আর চিতার ওপর হাসতে-হাসতে উঠে বসবে আগুনের মুখোশপরা গৌড়

কলকাতা ৬ আগস্ট ২০০১

উৎপাদন পদ্ধতি


বিদ্যুতের তার ঝড়ে ছিঁড়ে ঝুলে আছে
এতো কী ভাবছো বাজে সারাদিন ধরে
যাও ছুঁয়ে দাও গিয়ে মাথা ঠিক রেখে
মুঠোর ভেতরে নাও তীব্র জ্যোতিরেখা
একটা ঝলকে স্নেহ রক্তে ঢুকে যাবে
দেখে নাও মাটিতে পা থাকা কত ভুল
মাটি ও তোমার মাঝে দরকার ছিল
হাকুচ আড়াল কোনো হিজড়ে তৈজস
কীরকম জ্বলে ওঠো দেখতে চেয়েছি
শাদা ত্বক এক লহমায় পুড়ে কালো
চোখ থেকে চাউনি উধাও জানুদেশ
থিরথির কেঁপে ছিটকে ঘাসের মধ্যে
পড়ে তুমি বারকয় নড়েচড়ে স্হির
শেষবার তারপর ঝুঁকে চুমু খাবো ।

২১ শ্রাবণ ১৩৯১

ধনতন্ত্রের ক্রমবিকাশ
শেষরাতে পাশ থেকে কখন উঠেছ
চুপচাপ আলমারি ভেঙে কী অ্যাসিড
ঢকঢক করে গিলে মরছ এখন
আলজিভ খসে গেছে দুগালে কোটর
মাড়িদাঁত দেখা যায় কষেতে বইছে
গাঢ় ফেনা হাঁটুতে ধরেছে খিঁচ ব্যথা
চুল আলুথালু বেনারসি শাড়ি শায়া
রক্তে জবজবে মুঠোতে কাজললতা
শোলার মুকুট রক্ত-মাখা একপাশে
কী করে করেছ সহ্য জানতে পারিনি
শুনতে পাইনি কোনো চাপা চীৎকার
তবে কেন সায় দিয়েছিলে ঘাড় নেড়ে
আমি চাই যেকরেই হোক বেঁচে ওঠো
সমগ্র জীবন থাকো কথাহীন হয়ে

২২ শ্রাবণ ১৩৯১


অবন্তিকা বানুর জন্য প্রেমের কবিতা
অবন্তিকা বানু, রাষ্ট্রের দিকে তোলা  তর্জনী থেকে 
যে স্ফূলিঙ্গ ছড়িয়ে দিলি তুই
দেখেছিস, বোরখা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বুড়ি আর তরুণীরা
মাথায় হিজাবঘোমটা অবন্তিকাবানু
প্রান্তকে টেনে এনে  মেইনস্ট্রিমে মিলিয়ে-মিশিয়ে দিলি
এই বদল একদিনের নয়
এমনকি শুধুই বদল নয় তোর ওই তর্জনী তোলা
ভেতরে-ভেতরে ভয়ংকর ওলোটপালোট করে দিলি
তোর দেখাদেখি হিজাবঘোমটা ফেলে হাজার তরুণী
রাষ্ট্রের দিকে ওঠাচ্ছে তর্জনী
হয়তো তুই শুধু ছবি হয়ে থেকে যাবি কৌম-আয়নায়
কিন্তু ওই তর্জনী তোলা ভুলবে না কেউ
সশস্ত্র পুরুষদের তোর ধমকানি এবং হুঁশিয়ারি 
আমার আশিতম জন্মদিনে সবচেয়ে দামি উপহার

বুড়ি
তখন আমরাও নোংরা এমনকী অশ্লীল কথাবার্তা
করেছি বলাবলি, হেসেছি রাস্তার মাঝে কেননা আমাদের
ভাষা কেউই তো বুঝতো না । তখন বুড়ির ঢেউ-চুল
কোমর পর্যন্ত সুগন্ধ মাখানো, মুখ গুঁজে ঘুমোতুম তাতে--
চোখ দুটো, বুকও বড়ো-বড়ো, যা দেখে বড়দি বলেছিল
আমরা এরকম কনে তোর জন্যে খুঁজেই পেতুম না
তার আগে পীরিতের কতো খেল দেখিয়েছিলিস বাবা
তুই ঠিক ঈগলের মতো তুলে আনলি সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি
তখন বুড়ির জামদানি আঁচল উড়তো ময়ূরপঙ্খী হয়ে
মোজেক মেঝেয় ব্যালেরিনা হিল তুলতো সাম্বা নাচের ছন্দ।
একান্ন বছরে বুড়ির স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেসব ;
মাঝে-মাঝে বলে তোমার গোঁফও ছিল রাজকাপুরের।
বুড়ির পছন্দ মর্ত্যের হানি বাফনা আর ইন্দ্রজিৎ বোস
আমি সুচিত্রা সেন নার্গিস মধুবালাকে আজও ভালোবাসি--
বুড়ো বয়সে পৌঁছে বুড়ি বলে এটাই দাম্পত্য-জীবন
যৌবনে সংসারের খাইখরচ-ঝক্কি-ঝামেলায় টেরই পাইনি
দাম্পত্যের শেষ পর্বে শোক-দুঃখ-অপচয়ও আনন্দ আনে।
 

২৬ জুলাই ২০২০







































[কাব্যগ্রন্হ: মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা ২০০৪-১৯৬১, প্রকাশক: আবিষ্কার প্রকাশনী, ১২ এ বাঁশদ্রোণী ঘাট রোড, কলকাতা ৭০ , ফোন: ০৩৩-২৪১০-৫১৩২, মোবাইল: ৯